– হ্যাপ্পি নিউ ইয়ার দাদা!
– আরে পাঁচু যে!! হ্যাপি নিউ ইয়ার, হ্যাপি নিউ ইয়ার! তা, আছো কেমন?
– এই তো দাদা, আপনাদের দয়ায় ভালোই চলছে।
– উলটো বললে পাঁচু, তোমার দয়ায় বরং আমরা বেঁচেবর্তে আছি। তা আজ সকাল সকাল বাজারে যে! কাল রাতে পার্টি করোনি?!
– আর বলবেন না দাদা, কপালটাই খারাপ!
– কেন কেন? দোকান বন্ধ হয়ে গেছিল বুঝি? আগে থেকে তুলে রাখোনি? অবশ্য তুমি চাইলে বন্ধ দোকানও খুলে দেবে, তবু!!
– হে হে, খিল্লি করছেন দাদা!! না দাদা, অন্য কেস।
কয়েকদিন আগে মালতিকে বলেছিলাম যে লতুন বছরে একটা লতুন শপথ লেবো, ওই যে রিজোলিউশন না কি যেন বলেন আপনারা, সেইটে।
– বাঃ এ তো ভালো কথা! তা কেসটা খেলে কেন?
– ওই শপথ লিয়ে দাদা। মালতিকে বলেছিলাম পরের বছরে আর মাল খাবো না। তাই এই বছরের শেষ মাল খাওয়ার জন্যে সব জিনিসপত্তর রেডি করে রেখেছিলাম আগে থেকেই। বেশ মাঝরাত থেকে জমিয়ে বসব বলে যেই না বোতল খুলেছি, আর বলবেন না দাদা, বৌ এসে বলল তুমি না শপথ লিয়েছিলে আর খাবে না! আমি বললাম – মালতি, সে তো কাল থেকে রে, এই আজকেই তো লাস্ট।
তখন কি বলল জানেন!! বলল যে এখন তো ঘড়িতে বারোটা বেজে গেছে, আর বারোটা বেজে গেলে জানো না পরের দিন পড়ে যায়!! ব্যাস, এমনভাবে বলল মালতি, আমাকে সব আবার তুলে দিতে হল!! কি ফাস্টু খেলাম মাইরি জানেন!!
কোন শালারা এই নিয়মটা করেছিল জানেন দাদা?! সকাল না হলে কখনও পরের দিন হয় নাকি??
– হা হা হা হা! তোমার বৌ তো বেশ বুদ্ধিমতী হে পাঁচু!
– তা দাদা, সত্যিই কি রাত বারোটার পর পরের দিন হয়?
– হ্যাঁ ভাই পাঁচু, তা তো হয়।
– কি মুশকিল!! মাঝরাতে কেন নতুন দিন শুরু হয় দাদা?!
– বেশ কঠিন প্রশ্ন করলে তো হে পাঁচু! হুম, দাঁড়াও বলছি, তার আগে মাছটা ওজন করতে বলে দি সঞ্জু কে। ওহে সঞ্জু, বলছি যে পাবদাগুলো ভালো হবে কি? তাহলে গোটা ছয়েক…
– আরে দাদা দাঁড়ান, আজ আপনাকে মাছ আমি খাওয়বো। সঞ্জু, সবকটা পাবদা তুলে দে তো দাদাকে।
– আরে দাঁড়াও দাঁড়াও পাঁচু, পাগল হলে নাকি!! তুমি হঠাত করে করে খাওয়াতে যাবে কেন হে!! আর সবকটা মাছ নিয়ে কি শেষে পেটখারাপ করে মরব নাকি গো!!
– এই আপনাদের বড় বড় লোকেদের পোবলেম দাদা, কিছু মোচ্ছব না হলে কিছু করতে পারেন না আপনারা! ঠিক আছে দাদা, বৌদিকে বলবেন লতুন বছরে পাঁচু মাছ খাইয়েছে। আরে, তুই হাঁ করে কি দেখছিস সঞ্জু, দিয়ে দে মাছগুলো!!
– মরেছে, তুমি তো আজ মাছ খাইয়ে ছাড়বে দেখছি!! আচ্ছা শোনো শোনো, সবকটা মাছ নিয়ে তো পেট খারাপ করে লাভ নেই, তুমি বরং ওই গোটাচারেক দাও সঞ্জু।
– আপনারা সব পেটপাতলা লোক দাদা!! চারটে মাছ নিয়ে গেলে বৌদির সামনে আমার পেস্টিজ পাংচার হয়ে যাবে না!! সঞ্জু – আটটা মাছ তোল দাদার জন্যে। না দাদা, আর কোনো কথা নয়, মাছ ওই আটটাই, আর আপনি আমাকে ওই মাঝরাতে দিন হবার ব্যাপারটা একটু বুঝিয়ে বলুন তো ততক্ষণ।
– সে তুমি আজ কোনকিছুতেই আমাকে ছাড়বে না সেটা বুঝে গেছি! চলো এই রকটায় বসি যতক্ষণ মাছটা কাটা হচ্ছে।
…
…
দেখো পাঁচু, এই মাঝরাতে পরের দিন শুরু হবার ব্যাপারটা এমনিতে বোঝা কঠিন নয়, কিন্তু আমরা চট করে ধরতে পারি না কারণ আমরা ১২-ঘন্টার ঘড়ি দেখতে অভ্যস্ত।
– দাদা, ঘড়ি তো ১২-ঘন্টারই হয়!! ১৩-ঘন্টার ঘড়ির কথা কোনদিন তো শুনিনি!
– আরে না না, ১৩ ঘন্টার নয়, কিন্তু আমাদের একটা গোটা দিন তো ২৪ ঘন্টার হয়, তাই না? রাত ১২ টা থেকে দুপুর বারোটা, আবার সেখান থেকে রাত ১২ টা – ২৪ ঘন্টাই তো হল, তাই না?
– তা তো হল দাদা, কিন্তু…
– বলছি বলছি। ১২ ঘন্টা দিয়ে মাপা ছাড়াও, ২৪ ঘন্টা দিয়ে সময় মাপার আরেকটা পদ্ধতি আছে হে পাঁচু। এক কাজ করো, স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে লাগানো ঘড়িটা দেখো একবার তাকিয়ে। দেখো এখন দেখাচ্ছে ০৮-১৮, তাই তো? এবার বলো তো, কি করে বুঝবে এখন সকাল আটটা নাকি রাত আটটা?
– কি যে বলেন দাদা, সকালবেলা তো আলো থাকবে, আর রাতে অন্ধকার!! আমাকে বোকা বানাচ্ছেন দাদা!!
– আরে না না পাঁচু। আচ্ছা ধরো তুমি একটা ঘরে বন্ধ আছো, সেখানে বাইরের আলো বা অন্ধকার কিছুই দেখতে পাচ্ছো না, তখন কি করে বুঝবে?
– এই জন্যেই তো বলি যে এইসব ফ্যাকড়ায় না গিয়ে, আলো ফুটলে কাজে বেরিয়ে পড়ুন, আর অন্ধকার নামলেই বোতলটা খুলে বসে পড়ুন!
– সে তো হল, কিন্তু তাতে কি তুমি বুঝতে পারবে যে মাঝরাতে কেন তুমি কাল কেস খেলে এক বছরের জন্যে?
– ঠিক বলেছেন দাদা। না না, আপনি আমাকে বোঝান তো। কি করে ব্যাপারটা বুঝব বলুন তো ওই অন্য ঘড়িতে।
– ব্যাপারটা সোজা। ২৪-ঘন্টার ঘড়িতে সময় শুরু হয় ০০-০০ থেকে, আর শেষ হয় ২৩-৫৯ এ। তারপর আবার শুন্য থেকে শুরু। এই ঘড়ির হিসেবে সকাল আটটা হল ০৮-০০, আর রাত আটটা হল ২০-০০, আগের সঙ্গে ১২ যোগ করে দিলেই হিসেব সহজ। বুঝলে হে পাঁচু?
– অ্যাই সঞ্জু, একটা বিড়ি দে তো।
– হে হে। আরে তুমি প্রথমবার শুনছ বলে একটু কঠিন লাগছে, অভ্যেস হয়ে গেলে দেখবে খুব সোজা। তুমি বরং রোজ কয়েকবার করে এই প্ল্যাটফর্মের ঘড়িটা দেখবে। আর তোমার প্রশ্নের উত্তর হল, যেহেতু শুন্য থেকে দিন শুরু হয়, আর এই ০০-০০ মানে রাত ১২ টা, তাই মাঝরাতেই তুমি কাল কেসটা খেয়েছো। বুঝলে হে?
– বুঝলাম দাদা। আপনি আর কদিন আগে বোঝাতে পারতেন আমাকে, তাহলে আর…
– শোনো পাঁচু, তুমি সময়ের ব্যাপারটা না বোঝার জন্যে দুভাবে লাভবান হয়েছ – সেটা কি ভেবে দেখেছ?
– কি লাভ হল দাদা? আমি তো সবটাই লোসকান দেখছি!!
– এক তো, তুমি মদ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছ, সেটা লাভ তো বটেই। আর তার জন্যে তোমার মালতিও খুশি হয়েছে কতটা দেখবে – তাই না?
আর দ্বিতীয়, এই চক্করে তুমি একটা নতুন জিনিস শিখেও গেলে। সবটাই তো লাভ হে!
– এইটে খারাপ বলেননি দাদা, মালতি খুশি হয়েছে বটে! আজ বলেছে বাজার থেকে খাসির মাংস আনতে, রগরগে করে বানাতে বলব।
– আরে বাঃ পাঁচু, এ তো বছরের দারুণ শুরু হে!! কিন্তু তাহলে তো মাংসটা আনতে হবে – অজিতের দোকান তো? অলরেডি সাড়ে আটটা বাজে তো গো, এরপর তো আবার খাসির ভালো জায়গাগুলো আর পাবে না!
– পাঁচু কাঁচা কাজ করে না দাদা, সে আমি আগেই সাঁট করে এসেছি। অজিত আগেই আমার মাল সরিয়ে রেখে দিয়েছে।
– বাঃ, তাহলে তো কোনো চিন্তাই নেই। এক কাজ কর তাহলে পাঁচু, মাছটাও হয়ে গেছে দেখছি, তোমার মাংসটাও নিয়ে নাও, তারপর চলো নাড়ুর দোকানের কচুরি খাওয়াই তোমাকে, তারপর নাহয় বাড়ি ফেরা যাবে। কি বলো?
– এইটে গামা বললেন দাদা। চলুন আপনাকে আজ নাড়ুর পেশাল কচুরী খাওয়াবো।
– খাবো, কিন্তু এটা তোমাকে আমি খাওয়াবো। না, কোনো আপত্তি শুনছি না। চলো, বছরের শুরুটা আরো একটু জম্পেশ করা যাক।
– চলুন দাদা। তবে আমি তো প্রতি হপ্তাতেই নাড়ুর কচুরি খাই, আজ পেশাল কি হবে সেইটে বুঝলাম না! বছরের শুরু, মাঝখান, শেষ সবই তো একই হয় দাদা। বরং আপনি বলতে পারেন যে ওই পুজোর সময় আমার ব্যাওসা টা বেশ রমরমিয়ে চলে। ওইসময়ে দাদা আমি বেশ পেশাল মাল খাই একটু!!
– হুম, কথাটা মন্দ বলনি হে পাঁচু!!
– হ্যাঁ দাদা, এই লতুন বচ্ছরের ধুমটা ওই যত সাহেবদের ক্যালানেপনা!! আমাদের কি পয়লা বোশেখ নেই!!
– তা যা বলেছ পাঁচু। ওহে নাড়ু, দু জায়গায় কচুরি দাও তো দেখি, গরম গরম।
– বসুন দাদা – অ্যাই ঘনা, টুলদুটো গিয়ে দে তাড়াতাড়ি!
…
…
– আঃ, বেড়ে করেছে কিন্তু ভাই, তোমার এই স্পেশাল কচুরি!! সকালটা জমে গেল তো!
– এ তো রোজই করে নাড়ু!! আপনি আজ পেশালটা প্রথম খাচ্ছেন তো, তাই আপনার লাগছে। আচ্ছা, একটা কথা বলুন দাদা, এই হ্যাপ্পি নিউ ইয়ার টা নিয়ে সবাই এত ন্যাকামো করে কেন বলুন তো!! পয়লা জানুয়ারি র সঙ্গে অন্য দিনের কি তফাৎ আছে দাদা?
– হুম, এটা দারুণ বলেছ!! কথাটায় যুক্তি আছে। দেখো পাঁচু, আমরা যে ক্যালেন্ডার দেখি, তাতে জানুয়ারি থেকে বছর শুরু হয়, আর ডিসেম্বরে শেষ। কিন্তু আগে এরকম ছিল না ব্যাপারটা।
– কি বলছেন দাদা, আমি তো সেই কবে থেকে দেখে আসছি জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর!!
– আরে হ্যাঁ, আমি বলছি অনেক আগের কথা, মানে যখন রোমান সাম্রাজ্য ছিল। সেটা ধরো আজ থেকে মোটামুটি ২১০০ বছর আগের কথা।
– কি বলছেন দাদা, এই তো ২০১৬ সাল পড়ল, ২১০০ বছর আগে কি করে হবে!!
– আরে পাঁচু, এটা তো যীশুখ্রীস্টের জন্মের পর থেকে ২০১৬ বছর হল, কিন্তু তার আগেও তো লোকজন ছিল, তাদেরও তো দিন গোনার জন্যে কিছু একটা লাগত, আর সেখানেই একসময়ে এই রোমান ক্যালেন্ডার বেশ বিখ্যাত ছিল। আর সেই রোমান ক্যালেন্ডার থেকেই বদলাতে বদলাতে আমাদের আজকের ক্যালেন্ডার এসেছে। গপ্পোটা মজার – শুনবে নাকি?
– বলুন বলুন!
– সেই সময়ে, বছরে ১০ টা মাস ছিল, আর মাসে মোটামুটি ওই ৩০ দিন করে। আর মাসের নামগুলো বেশ অর্থবহ ছিল।
– কি “বহ” বললেন দাদা?!!
– অর্থবহ – মানে হচ্ছে যে কথাটার বেশ সুন্দর মানে আছে। যেমন ধরো, সেপ্টেম্বর – রোমান সংখ্যাতত্ত্ব অনুযায়ী “সেপ্টো” মানে হল সাত, আর সেপ্টেম্বর ছিল সাত নম্বর মাস। একইভাবে অক্টোবর, নভেম্বর আর ডিসেম্বর!
– সে কি দাদা, সেপ্টেম্বর তো ৯ নম্বর মাস আমাদের!!
– হ্যাঁ, কিন্তু সেটা আমাদের এখনকার ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, যেটাকে বলে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার। এই ক্যালেন্ডারে ১২ মাস, আর আরো নিঁখুত করে বলতে গেলে ৩৬৫ দিন ৫ ঘন্টা ৪৯ মিনিট ১২ সেকেন্ড। কিন্তু রোমান ক্যালেন্ডারে ছিল সব মিলিয়ে ৩০৪ দিন। সেই অনুযায়ী তোমার হ্যাপ্পি নিউ ইয়ার হত যে সময়ে, সেটা এখনকার মার্চ ধরো।
– কিসব হিসেব বললেন মাইরি!! নাড়ু, আরো চারটে কচুরি দে তো এদিকে, মাথাটা ঘেঁটে গেল পুরো!!
– হা হা! এতো কিছুই নয় পাঁচু, মায়ান-দের ক্যালেন্ডারও বেশ ইন্টারেস্টিং ছিল। মায়ান কারা জানো তো?
– ওপাড়ার মায়া-কে চিনি দাদা, কিন্তু মায়ান!!
– আরে না না, এ অন্য মায়া!! তুমি তো ফুটবল দেখো, ওই যে মেক্সিকো টিম খেলে না, বা হন্ডুরাস – ওইসব দেশ যেখানে, ওইসব জায়গাতেই ছিল একটা উন্নত সভ্যতা, যার নাম ছিল মায়া সভ্যতা। সেইসব লোকেদের বলে মায়ান।
– আপনি মাইরি হেব্বি জ্ঞানী লোক!!
– আরে ধুর, সেরকম কিস্যু না, এ তো আজকাল ইন্তারনেটেই পাওয়া যায়। তো যাই হোক, সেই মায়া-দের ক্যালেন্ডার ছিল আবার দুরকম। তবে যেটা মোটামুটি লোকে জানে সেটাকে বলা হত “হাব”। সেই ক্যলেন্ডারে একটা মজার জিনিস ছিল এই যে, গোটা ৩৬৫ দিনই ছিল ওদের, কিন্তু তার মধ্যে ৩৬০ দিন ছিল ১৮ টা মাসে ভাগ করা, প্রতি মাসে ২০ দিন করে। সেই হিসেবে হয় তোমার ৩৬০ দিন। এবার পড়ে থাকল হাতে আর ৫ টা দিন!! এই পাঁচটা বেনামী দিনকে একসঙ্গে বলা হত “ওয়ায়েব”। মায়ানরা
বিশ্বাস করত যে এই পাঁচদিনে মনুষ্যজগত আর আত্মাদের দুষ্টজগতের মধ্যে একটা সুড়ঙ্গ খুলে যায়, আর সেই রাস্তা ধরে দুষ্ট আত্মারা মানুষের মধ্যে চলে আসে অনিষ্ট করতে। তাই সেই সময়ে তারা পারতপক্ষে বাড়ি থেকে বেরত না।
– ওরেসশালা!!
– এ তো গেল আগের দিনের কথা। এখনকার কালেও কতরকম ক্যালেন্ডার আছে জানো!!
– হ্যাঁ দাদা, বাংলা আর ইনজিরি – এই দুরকম।
দাদা, দুটো জিলিপি দিতে বলি?
– অবশ্যই, জিলিপি তো খেতেই হবে!! দাও দুটো।
শোনো, বাংলা আর ইংরাজি ক্যালেন্ডার ছাড়াও আরো অনেক রকম ক্যালেন্ডার আছে। তবে সবকটা নিয়ে আজ বলতে গেলে যা সময় লাগবে তাতে তোমার বৌদি আমাকে ঘরছাড়া করবে, আর তোমার মালতিও তোমাকে ছেড়ে কথা বলবে না। তাই এই জিলিপিটা খেতে খেতে আজ আর একরকম ক্যালেন্ডারের কথাই বলব।
– বলুন দাদা। তবে আরেকদিন কিন্তু আপনার সঙ্গে বসতে হবে, আপনার থেকে এই গপ্পোগুলো শুনতে হেব্বি লাগছে কিন্তু!!
– বেশ তো, সে বসলেই হয় আরেকদিন। আপাতত এই গপ্পোটা বলে ফেলি। তুমি তো চাইনিজ খেতে খুব ভালোবাসো দেখেছি, প্রায় রোজই তো মনা-র দোকানে দাঁড়িয়ে চাউমিন আর চিলি চিকেন খাও।
– র্যাপচিক বানায় কিন্তু দাদা, একদিন খেয়ে দেখবেন।
– সে আমি খেয়েছি, ভালোই বানায়। কিন্তু এই চাইনিজ যাদের খাবার, সেই চাইনিজ দের কিন্তু একটা আলাদা ক্যালন্ডার আছে। এরা এখন যে ক্যালেন্ডারটা ব্যবহার করে, সেটার সুত্রপাত হয় প্রায় ৪০০ বছর আগে। অবশ্য তাতে কিছু পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু ওটাই মূল।
– কি বলছেন দাদা, চাইনিজ মাল ৪০০ বছর টিকে আছে!! আমার মোবাইল তো শালা ৪ মাসও চলে না!!
– হা হা!! এটা হল গিয়ে আধুনিক চৈনিক সস্তার কারিগরি। কিন্তু প্রাচীন চৈনিক জিনিস কিন্তু রীতিমত টেকসই হত। শুধু তাই নয়, প্রথম চৈনিক ক্যালেন্ডার তৈরি হয় এখন থেকে মোটামুটি ২২০০ বছর আগে।
– তার মানে তো সেই যীশুদাদুর জম্মের আগে, তাই না দাদা?
– বাঃ, এই তো তুমি হিসেবটা বেশ বুঝে গেছ!!
– কি যে বলেন দাদা, আপনি জলের মত বুঝিয়ে দেন যে!
কিন্তু, তাহলে তো, তখন শুধু হ্যাপ্পি নিউ ইয়ার ছিল, কিন্তু হ্যাপ্পি কিসমাস তো ছিল না!! এ তো ফুল্টু লস দাদা!! কিসমাস ছাড়া নিউ ইয়ার হয় নাকি!!
– তাই তো দেখছি ভায়া! আর এই চৈনিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এবছর তাদের নিউ ইয়ার পড়েছে আমাদের ক্যালেন্ডারের ৮ ই ফেব্রুয়ারি তে। আর জানো তো, আমাদের এই কলকাতায় চৈনিকদের বেশ বড় সংখ্যায় উপস্থিতি আছে। তবে তুমি যদি ওদের নিউ ইয়ার উদযাপন দেখতে চাও, সোজা চলে যাও ট্যাংরা অথবা টেরিটি বাজার। ওখানেই সব কলকাতার চৈনিকরা এসে জড়ো হয় নিউ ইয়ার মানাতে, সারা সপ্তাহ ধরে গান-বাজনা আর ড্রাগন নাচ চলে, আর সেটা শুরু হয়ে যায় প্রায় আসল দিনের ১ সপ্তাহ আগে থেকেই। তাহলেই ভেবে দেখো হে পাঁচু, শুধু নিউ ইয়ারের দিনটা নয়, তার আগের দিনগুলোও বেশ হ্যাপ্পি!
বেশ, চলো এবার ওঠা যাক, সাড়ে নটা বাজতে চলল প্রায়। এবার গিয়ে বাজারটা নামাতে হবে, নাহলে আবার কাজের মেয়েটা তার আগেই ঘর মুছে দিয়ে চলে গেলে পরে তোমার বৌদি খুব রেগে যাবে।
– বাঃ দাদা, দারুণ কিছু খবর দিলেন তো, একবার মালতিকে নিয়ে যেতে হবে দাদা ওদের এই উৎসব দেখতে। মালতি আবার ওই দৈত্য-দানো নাচগান দেখতে হেব্বি ভালোবাসে মাইরি!! চলুন দাদা, আপনাকে নামিয়ে দিচ্ছি যাবার পথে।
– না না, তুমি আবার কষ্ট করবে কেন! আমি রিক্সা করে চলে যাচ্ছি।
– এই দাদা আপনাদের ভদ্দরলোকেদের এক পবলেম!! এত মিনমিন করবেন না তো, চলুন, উঠে বসুন তো বাইকে।
– আজকে মনে হচ্ছে তোমারই দিন। চলো ভাই পাঁচু, তাই সই। নাও, চালাও ভাই।
…
…
– না দাদা, এইসব পেশাল দিন-টিন আপনাদের জন্যেই ঠিক আছে, আমাদের দাদা যেদিন ব্যাওসা ভালো, সেদিনই হ্যাপ্পি নিউ ইয়ার। তবে জানি না কেন সবাই শালা এটাকে হ্যাপ্পি বলে!! এই তো লাস্ট বছরের পত্থম দিনেই আমাদের বস্তির চন্দনের মেয়ে হল। চন্দন ফিরছিল গোঘাটা থেকে ওর কারবার ভুতোর হাতে দিয়ে। ধম্মতলায় বাস থেকে নামার পরেই শালা বাপির ছেলেরা ঠুকে দিয়ে চলে গেল,
তক্কে তক্কে ছিল আগে থেকেই!! আবার সেই বছরই দেখুন, শম্পা সরকারী চাকরিটা পেয়ে গেল পরপর
চারবার চেষ্টা করার পর! নিউ ইয়ার ছাড়া কি হ্যাপ্পি হয় না দাদা, সব হয়!! আমাদের
নিতাই দাদু আজ সকালেও রোজকার মতই ভোর ৬ টায় রিক্সা নিয়ে বেরিয়েছে। আমাদের নাহয় আজ
একটু মস্তি করার দিন, কিন্তু আপনার বাড়ির কাজের মেয়েটা তো আসবে কাজ করতে!! ওসব
হ্যাপ্পি নিউ ইয়ার ফিয়ার বলে কিছু হয় না দাদা, সবই বড়লোকেদের ফাট্টুবাজি দাদা, বুঝলেন!!
নিন দাদা, লেমে পড়ুন। গিয়ে বৌদিকে বলবেন যে পাঁচুভাই হ্যাপ্পি নিউ ইয়ার বলেছে।
– অবশ্যই বলব ভায়া। আর তুমি বাড়ি গিয়ে দুপুরে জম্পেশ করে একটা মাংস-ভাত সাঁটিয়ে দিও কিন্তু।
– যা বলেছেন দাদা। আচ্ছা দাদা, আবার একদিন আপনার কাছে গপ্পো শুনব নাহয় সময় করে, আজ চললাম।
– হ্যাঁ এসো ভাই।
…
…
– ও হ্যাঁ, পাঁচু ভায়া, বাড়ি গিয়ে তোমার মালতিকে বোলো যে সে যদি ওই দৈত্য-দানো নাচ দেখতে চায়, তাহলে তোমাকে নিয়ে যেন চলে আসে ৮ ই ফেব্রুয়ারি – তোমার বৌদিরও আবার মালতির মতই ওইসব খুব পছন্দ – একসাথে যাওয়া যাবে নাহয় দেখতে!
Leave a Reply