রসিক-বেরসিক

থ্রী ইডিয়েটস নিশ্চয় দেখেছেন? ওখানে র‍্যাঞ্চো একটা হেব্বি ডায়ালগ দিয়েছিলো – সেটার সারাংশ ছিল এই যে যখন লোকে প্রেমে পড়ে, তখন হাওয়া বইতে থাকে, দোপাট্টা উড়তে থাকে, পরিবেশটা ফিল্মি হতে থাকে।
ব্যাপারটা মেলড্রামাটিক শুনতে লাগলেও কিন্তু তা নয়।

বিশ্বাস হচ্ছে না?

কোনোদিন হয়েনি বলছেন এরকম?

তাহলে দুটো সম্ভাবনা আছে।
১। আপনি কোনোদিন প্রেম-টেম করেননি, সারাজীবন শুধু ধোপার হিসেব করেছেন, আর লোককে কাঠি করেছেন।

২। নয়েত, এসবই হয়েছে, খেয়াল করেননি।

২ নম্বর ক্যাটেগরি-র লোকেদের জন্যে আমি ব্যাপারটা খোলসা করছি (১ নম্বর ক্যাটেগরি-র লোকেদের জন্যে যেটা বলতে চাইছি, সেটা ভদ্র-ভাষায় লেখা যাবে না এখানে, ক্ষমা করবেন)।

ধরুন আপনি তখন স্কুলে পড়েন, স্কুল শেষে এবার টিউশন যাচ্ছেন।

গিয়ে দেখলেন, তখনো বিশেষ কেউ আসেনি, এই ৩-৪ জন ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে।

ভালো কথা, আপনি গিয়ে চুপচাপ বসে পড়লেন।

৫ মিনিট পর, দেখলেন, আপনার ব্যাচ-র সেই মেয়েটি ঢুকলো, যার প্রতি সব-কটা ছেলের টাল আছে।

(ক্ষমা করবেন, আমি এটা ছেলেদের দিক থেকে লিখছি, মেয়েদের দিক থেকে লেখা সম্ভব না। বুঝেই উঠতে পারলাম না এখনো, তায়ে আবার লেখা!!)

এই পর্যন্ত ঠিক ছিল, কারণ এতো রোজ-ই হয়, মেয়েটি ঢোকে, আর সবকটা ছেলে হাঁ করে দ্যাখে (আপনিও তার মধ্যে একজন, মাথা নিচু করে লুকোনোর মত কিছু হয়েনি, ব্যাপারটা স্বাভাবিক)।

কিন্তু আজ হোল ক্যাচাল। মেয়েটি এসে বসল আপনার-ই পাশে (যেটা কোনদিন হয়েনা)।

আপনি অলরেডি ঘামতে শুরু করেছেন। হাতড়ে একটা খাতা বার করে আপনি পড়ার ভান করতে শুরু করলেন এবার।

কি ভাবছেন? কেউ কিছু বোঝেনা!! আপনার ওই বয়েস-র মেয়েরা না!! থাক, আর বললাম না।

বেশ খানিক্ষন চুপচাপ, আপনি ভাবলেন – যাক, বেঁচে গেলাম এযাত্রা (মনে কিন্তু ইচ্ছে শাহরুখ খান হবার, কিন্তু ইয়েতে দম নেই আরকি)।

এইভাবে যখন বেশ নিশ্চিন্ত বোধ করতে শুরু করেছেন, যে আর বোধহয় আজ বেঁচে গেলেন, তখনই মেয়েটি বলে উঠলো – “কিরে, কথা বলছিস না যে!”।

ব্যাস!! যাও ঘাম শুকিয়েছিল, এবার যে কি কি ভিজতে আরম্ভ করলো, বলা মুশকিল!

সেই দিন-টাতে, টিউশন শেষ হবার পর, যখন বাড়ি ফিরলেন, ভেবে বলুন তো, ভর-গরমে বসন্তের হাওয়া মনে হয়েনি!! মিথ্যে বলবেন না।

বাঁই বাঁই করে সাইকেল চালাননি সেদিন!

যে রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফেরেন, সেই রাস্তা দিয়েই ফিরেছিলেন? নাহ। হতে পারে না।

পাড়ার কুকুর টাকে ২ টো বিস্কিট খাওয়াননি?!

ওই পাড়ার গজাকে, যাকে দেখলেই আপনি খিল্লি করেন রোজ, তার দিকে তাকিয়ে সেদিন অমায়িক হাসেননি বলছেন!! (গজা তো ট্যান, ছেড়ে দিন)

বাড়ি ফিরে, মা জিগ্যেস করেননি – ওরে, জামাটা ছেড়ে ফ্রিজের উপর কেনো রেখেছিস?!

বুঝলেন কিছু?

কি বুঝলেন? দাঁড়ান, আরো একটু আছে।

শুধু স্কুলের বয়েসেই এসব হয় ভাববেন না।

যখন আরেকটু বড় হলেন, কি করতেন তখন? এইরকম কেস ঘটলে?

বাড়ি এসে আপনার প্রিয় গানটা চালিয়ে একা একা ফিল্মি স্টাইলে পুরো ঘর জুড়ে নাচেননি বলছেন?
বিবেক নেই আপনার!! সত্যিটা বললে কি খুব ক্ষতি হবে!

২ টো কবিতা লেখেননি!! মানছি, পাতে দেবার মত নয় সেগুলো, পরে আপনিই হয়েত ছিঁড়ে ফেলেছেন লজ্জা পেয়ে, কিন্তু লিখেছিলেন তো! সেটা কম কথা!

তবে এই যা বললাম, সেগুলো আমাদের সময়ে হত। তাই বলে এটা আবার ভাববেন না যে আমি আর ডাইনোসর-রা এক-ই সময়ের।

তবে আমি এই লেটেস্ট জেনেরশন-র ছেলে-পুলে-দের নিয়ে ঠিক সিওর নই।

এরা আদৌ প্রেম করে বলে তো মনে হয় না, তবে ডেটিং করে।

আর এতো টেকনিকাল ব্যাপার-র সঙ্গে ম্যাজিক খাপ খায়ে না বোধয়।

আমার মনে হয়, এরা যদি প্রেম-এ পড়ে, বাড়িতে ভিডিও গেম-টা সেদিন একটু কম খেলে, আর ফেসবুকে একটা-দুটো এমন স্ট্যাটাস দেয়, বাপের সাধ্যি নেই কেউ বোঝে (নিজেরাও যে বুঝে দেয় তা নয়, তবে সেটা ভাল লক্ষন, কারণ তার মানে বুঝতে হবে যে এমন প্রেম-এ পড়েছে যে কিছুক্ষনের জন্যে অন্তত বাস্তবে ফিরেছে)।

তা সেই যাই করুক, অন্তত কিছু তো করে।

ধোপার হিসেব আর লোককে বসে কাঠি তো করেনা!!

তবে, ব্যাপারটা হল, এই যে এত কিছু বললাম, এগুলো যে শুধু প্রেমে পড়লেই হয়, এমন শুধু নয়।

খুব আনন্দ হলেও হয়।

আবার টেরিয়ে তাকাচ্ছেন!! আশ্চর্য!!

মানতে হলে মানুন, নয়েত যান-না, গিয়ে ২ টো আঁটি বাধুন।

যারা এটা পড়ে, চিত হয়ে বিছানায়ে শুয়ে, সিলিং-র দিকে তাকিয়ে নস্টালজিক হচ্ছে, হতে দিন সেটা, বেরসিক কোথাকার!!


Comments

3 responses to “রসিক-বেরসিক”

  1. দুর্দান্ত। গুরুদেব। এরকম, এক্কেবারে এই ঘটনা আমার হয়েছে। এবং যা যা বলা হয়েছে সবকটা। সোজাসাপটা তরতরে কলমে বলা কথা গুলো বড্ড বেশী সত্যি কথা। সাবাস। আরো পড়বার অপেক্ষায়।

  2. হা হা। পড়ে বেশ মজা পেলাম। হালকা চালে পালটা হাওয়া।

  3. 3 idiots r sarangso ta akbar amr o mone hoyechilo. bagini glacier name uttarakhand e akta trek krte giye

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *