নাচতে আমি একদমই পারিনে।
গাইতে পারিনে, বাজাতেও নয়, তবে শুনতে আমার মন্দ লাগেনা সেরকম। তাই, গানবাজ না হলেও, গানবাজনা টা আমার ভালোই লাগে।
সেদিন, গাড়ী চালাচ্ছিলুম, রাস্তা দিয়ে, গড়গড়িয়ে। গাড়ীর ধর্মই গড়ানো, তাই আমি আপত্তি করিনিকো। কিন্তু, কানে কোনো গান না আসলে, আমার বড় আপত্তি হয়।
আজকাল চাইলে গাড়ীতেই গান শোনা যায়। মজলিশী না হলেও, রাস্তাতে সময়টা গড়গড়িয়ে কেটে যায়।
বোতাম টিপে গান চালিয়ে দিতে আমার কোনো অসুবিধা হয় না। গাড়ী আর গান একসাথে চলতে থাকে।
নাচতে না জানলেও, তাল ঠুকতে অসুবিধা কোথায় – আমি মনে করলুম। যেমন ভাবা, তেমন কাজ। তাছাড়া, গাড়ী ঠোকার থেকে তাল ঠোকা অনেক বেশী শ্রেয় বলেই আমার মনে হল।
ঠুকতে শুরু করলাম, গানের তালে, পায়ের তাল। হঠাৎ খেয়াল হল, গাড়ীটাও যেন নাচছে।
বেশ আশর্য হলুম, গাড়ী কি নাচতে পারে!
মানুষ নাচে, বেড়াল নাচে, এমনকি হাতিও নাচে এরকম কথা শুনেছি বটে, কিন্তু গাড়ী এর মধ্যে কোন শ্রেণীতে পড়ে সেটা আমি জানিনেকো!
এমনকি, গাড়ী কোনো প্রাণী কিনা সেটা নিয়েও আমার মনে যথেষ্ট সন্দো হল।
আচায্যি জগদীশ চন্দ্র বোস যদিও বলে গেছিলেন, গাছ-টাছেরও নাকি প্রাণ আছে। গাড়ী যে গাছ নয়, সে নিয়ে আমার কোনো সন্দো ছিলনাকো, তবে কিনা টাছ নিয়ে আচায্যি মশাই কিছু স্পষ্ট করে বলে যাননি!
তেনার ঠিকানাটাও আমার জানা ছিলনাকো যে গিয়ে একবার জিগ্যেস করে আসব।
মনের ভুল ভেবে গানে মন দেওয়াটাই আমার কাছে বুদ্ধিমানের মনে হল, এবং নিজের বুদ্ধিতে আমি নিজেই চমৎকৃত হলুম!
“লুঙ্গি ড্যান্স” চলছিল, গানের কল থেকে, কলকল করে বয়ে যাচ্ছিল কানের মধ্যে দিয়ে।
কানে গান আসামাত্র আমার পা শুরু করল, তাল ঠুকতে, তালে তালে।
গাড়ীও আবার নাচতে আরম্ভ করল, একই তালে!
যারপরনাই আশ্চর্য হলুম – গাড়ীও যে লুঙ্গি, আর সেটা পরে নাচের মাহাত্ম্য বোঝে, এটা আমার জানা ছিলনাকো!
মনে মনে পণ করে রাখলুম, যে বাড়ী ফিরেই কটা লুঙ্গি জুড়ে গাড়ীকে পরাতে হবে। কারুর ইচ্ছে অপূর্ণ রাখার ইচ্ছে আমার যথার্থ মনে হলনা একদমই।
পরের গান – “আ-পড়ি পোড়ে পোড়ে” শুরু হতেই তালও শুরু হল, আমার পায়ে। তৎক্ষণাৎ আমারও পড়ে যাবার উপক্রম হল – গাড়ীও তাল ঠুকতে শুরু করল দেখে।
আমার গাড়ী যে দক্ষিণ ভারতের ভাষা বোঝে এটা আমার একদমই জানা ছিলনা!
একজন বাঙালীকে একটি দক্ষিণ ভারতীয় গাড়ী বিক্রি করারও কি অর্থ হতে পারে, সেটিও আমাকে ভাবিয়ে তুলল যথেষ্ট।
ভাবতে আমি মোটেই ভালোবাসিনে, বরং ভাবানোতেই আমার আনন্দ! কিন্তু আমার গাড়ী যে আমাকেই ভাবিয়ে তুলল, এটা ভাবতেই আমার বেশ ভাবনা হল!
বাধ্য হয়ে ভাবতে বসলাম, গাড়ীরই সিটে।
তখনই – ইউরেকা!!
আমার পায়ের তাল যে গাড়ীর পাদানি তে প্রসারিত হয়েছিল, আর তাতেই যে তার টালমাটাল অবস্থা হয়ে বেচাল করছিল, এটা আমার মাথায় বিদ্যুতের মত খেলে গেল!
আর সেই বিদ্যুতের ধাক্কায় আমি খানিক তড়িতাহত হয়ে বসে রইলুম!
এর পরে, তালে তালে গাড়ীর এই নাচে আমার আর কোনো আপত্তি রইল না।
Leave a Reply