অরুণ অনেকদিন পর ভোরবেলা দৌড়তে গেছিলো।
এখন তো রাস্তাঘাট ফাঁকাই থাকে। ইতিউতি লোকজন বাঁচিয়ে, কিলো ছয়েক দৌড়ে ফিরে অরুণ সবে দম নিচ্ছিলো বাড়ির গলির সামনে দাঁড়িয়ে।
এমনি সময়ে পাড়ার কুকুরগুলো ল্যাজ নাড়িয়ে ছুটে এলো।
না, অরুণের দিকে নয়।
রাস্তার ওপারে, কিছুটা দুরে বসে থাকা এক মহিলার দিকে।
অবিন্যস্ত চুল, অনেকদিনের না ধোয়া। গায়ে একটা ময়লা কালচে-সবজেটে জামা, আর তার উপর আরো কালচে একটা অ্যাপ্রণ জাতীয় জিনিস। পাশে একটা প্লাস্টিকের লাঠি।
মহিলা একটুক্ষণ তাকিয়ে দেখে, জামা আর অ্যাপ্রণের ভিতরে হাত ঢুকিয়ে বার করল একটা আধখাওয়া বিস্কুটের প্যাকেট।
কুকুরদের লাঙ্গুলসঞ্চালন আরো জোর হল।
ওদের কিসব বলতে বলতে মহিলা বিস্কুটগুলো ছড়িয়ে দিলো।
অরুণ থমকে দাঁড়িয়ে রইল।
সে নিজেও অনেকবার অনেককে খাবার কিনে দিয়েছে। কিন্তু খিদের মুখে, নিজের খাবার, অন্যকে দিয়ে দেওয়া…
ভাবতে ভাবতে কিছুক্ষণ পরে অরুণ ফিরে এলো ওই জায়গাটায়। হাতের থলিতে একটা জলের বোতল, আর একটা নতুন না-খোলা খেজুরের প্যাকেট।
কই, মহিলা গেলেন কোথায়?
বুকটা ধড়াস করে উঠল অরুণের।
দশ মিনিটও হয়নি অরুণ গেছে!
এদিক-ওদিক তাকাতেই – নাহ, হাসি ফুটে উঠলো অরুণের মুখে।
মহিকা খানিক জায়গা বদল করেছেন – মিটার কুড়ি যাবার পরেই আবার বসে পড়েছেন।
এগিয়ে গেলো অরুণ, হাতের জিনিস নিয়ে, গিয়ে পাশে বসল।
মহিলার মুখে এক অনাবিল হাসি।
জলটা আর খেজুরের প্যাকেটটা এগিয়ে দিলো অরুণ।
সম্ভবত তেষ্টা পেয়েছিলো খুবই, তবু দুঢোক জল খেলেন।
হয়ত বাঁচিয়ে রাখলেন কারুর জন্যে!
ভাষার সমস্যা, তবু দুটো কথাবার্তার পর, ভদ্রমহিলা খুব সঙ্কোচ ভরে জিগ্যেস করলেন, একটু খাবার হবে?
ঝলমলে সকালটাও যেন কেমন বিষাদময়!
হাতের খেজুরটা দেখাতে, খোলার চেষ্টা করলেন। দুর্বল হাত ব্যর্থ হচ্ছিলো বারবার।
অরুণ হাত বাড়িয়ে প্যাকেট টা নিয়ে খুলে, এগিয়ে দিলো আবার।
মহিলা মায়াময় চোখে তাকিয়ে খেজুরের প্যাকেট টা একটু বাড়িয়ে বললেন, তুমি নাও!
অরুণ ফিরছিলো, কিন্তু চারিদিক ভীষণ ঝাপসা হয়ে এসেছিলো।
দুটো খেজুরের প্যাকেটের মধ্যে ও শেষ পর্যন্ত না-খোলা প্যাকেটটাই নিয়ে এসেছিলো – তবুও, নিজেকে ধিক্কার জানানোর ভাষা পাচ্ছিলো না সে।
তবু, প্রায়শ্চিত্তের সুযোগ রইল।
কাল আরেকবার আসতে বলেছে ওনাকে, সকালে।
ঝাপসা কুয়াশা কেটে সূর্য উঠছে ধীরে ধীরে।
অরুণের মুখে হাসি ফুটে উঠল।
Leave a Reply