আজ খুব মটকা গরম হয়ে গিয়ে ঘুমটা ভাঙ্গলো সকাল ৭ টার সময়।
উঠে বুঝলাম ব্যাপারটা।
ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমী দুটো আবার কথা শুরু করেছে!!
বুঝলেন না তো?
আরে কিছু না, আমাদের বাড়ীতে দুটো মুখোশ আছে। তারা খাটের পাশের দেওয়ালে ঝুলে থাকে।
সেটা সমস্যা নয়। মুশকিল হল যে তারা মাঝে-মধ্যেই নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলে।
একটু ভড়কে গেলেন কি?
আপনার কোন দোষ নেই।
ব্যাপারটা খোলসা করতে দিন।
অনেকদিন আগের কথা। ঘরে বসে কিছু একটা করছিলাম মন দিয়ে।
“কবিতা লিখছিস?”
বললাম “হ্যাঁ”।
আবার লিখতে লাগলাম।
“একটু পড়ে শোনা না”
আচ্ছা মুশকিল হল।
ঝাঁঝিয়ে উত্তর দিতে গিয়ে চমকে উঠলাম!!
ঘরে তো আমি একা আছি!!!
গা-টা বেশ শিরশির করে উঠলো (আমি এমন কিছু বীরপুঙ্গব নই)।
কবিতা উঠলো মাথায়।
এই ভর-সকালে এরকম অশরীরী ব্যাপার, ভাল্লাগে না। ধুর ধুর!
একটু চুপ করে বসে রইলাম।
হঠাত – “লে হালুয়া, ভয় পেলি নাকি?”
এক ঝটকায় আমি খাটের কোনায়, দেওয়াল-এ পিঠ! (বললাম তো আগেই, তেমন কিছু সাহসী নই, হাসছেন কেন?!!)।
৫ মিনিট ধরে চুপচাপ বসে রইলাম।
একটু মাথাটা শান্ত হলে মনে হল যে এইভাবে দিনের বেলায় ভয় পাবো!! কি মেয়েলী ব্যাপার!!
(মহিলারা আমার মুন্ডুপাত করার আগেই বলে দি, এই কথাটা মূলত ওই আরশোলা দেখে বাড়ী মাথায় করার ব্যাপারটা মাথায় রেখে বলা, ওটাকেই বেঞ্চমার্ক ধরেছি আপাতত।)
একটু এদিক-ওদিক দেখলাম – বোঝার চেষ্টা করলাম আওয়াজটা কোন দিক থেকে এল!!
শিওর হতে পারলাম না!
ভাবলাম, একটু উঠে কিছু করি বরং, মাথাটা হয়তো ঘেঁটে গ্যাছে।
শুকিয়ে যাওয়া জামাকাপড় পাট করলাম।
ঘরের কোনায় ঘুড়িগুলো হেলে শুয়ে ছিল, সোজা করলাম।
পাশের বাড়ীর অদ্ভুত সুরে গান করা (গাধার চিৎকার বললে আপনাদের বুঝতে একটু সুবিধা হবে বোধহয়) মেয়েটাকে আমার জানলার আড়াল থেকে দুটো কাঁচা দিলাম।
এইবার মনে বেশ শান্তি নিয়ে, মুচকি হেসে, দেওয়ালের মুখোশগুলো ঝাড়তে এলাম – বড্ড ধুলো পড়েছিল।
“বাহ, কবিতা শোনাতে বললাম, শোনালি না, এখন আবার মুখে এই নোংরা কাপড়টা বোলাচ্ছিস!”
উরেহ শালা!!
মেঝে থেকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম।
“আশ্চর্য! ভড়কাচ্ছিস কেন রে?”
নাহ, নাচবো তো!!
তো, যাই হোক, এইভাবেই শুরু।
(সেই কবিতাটার কি হল জিগ্যেস করবেন না, ওটা পুরো ঝোল হয়ে গিয়েছিল। এমন নয় যে পুরো লিখতে পারলে দেশ পত্রিকায়ে প্রকাশিত হত!! তবু!)
একদিন স্কুল থেকে ফিরে খেলতে যাব বলে তৈরি হচ্ছি।
হঠাত ব্যাঙ্গমা বলে উঠলো – “আরে মোলো যা, তোর কি কোন আক্কেল নেই, ব্যাঙ্গমীর সামনে!! ছি ছি!”
কি মুশকিল!! এতো নতুন ঝামেলা যুটলো!!
ব্যাঙ্গমী আরেক পিস!!
“দ্যাখ ব্যাঙ্গমা, ছেলেটার গড়নটা কিন্তু বেশ ভাল”
কান-টান লাল হয়ে গেল।
“দ্যাখ দ্যাখ ব্যাঙ্গমা, আবার লজ্জা পাচ্ছে! হি হি।”
কোথায় পালাই!!
“তুই হাসছিস ব্যাঙ্গমী!! এই বাচ্চা ছেলেটাকে দেখে!! ছি ছি, তুই কি নির্লজ্জ!! ওদিকে তাকাবি না বলছি”
“আশ্চর্য! এই বয়েসেও তোর এত হিংসে কেন রে!!”
“কিসের হিংসে!! হাজার হোক, একটা উঠতি বয়েসের ছেলে, ইয়ে – মানে, তৈরি হচ্ছে, তুই দেখবি!!”
“আচ্ছা!! এখন আমাকে বলছিস!! আর তুই যে এবাড়ি আসার আগে সেই দোকানির বউএর সঙ্গে সারাদিন গল্প করতিস, সে বেলা!!”
শুরু হয়ে গেল দুটোর!
সত্যি বলতে কি, মাঝে মাঝে ভালোই লাগে এদের এই ঝগড়া আর খুনসুটি।
“প্রেম করছিস?” – হঠাত একদিন ব্যাঙ্গমীর প্রশ্ন।
“কি করে বুঝলি?” – জিগ্যেস করলাম।
“ওরে, বয়েস তো কম হল না, এসব বুঝি”
কথা ঘোরাতে হবে, নইলে এখুনি আমার গুষ্ঠীর পিণ্ডি উদ্ধার করবে।
বললাম – “কত বয়েস তোদের? দেখে তো কিছু বোঝা যায় না!”
ব্যাঙ্গমী একটা কান এঁটো করা হাসি হাসল।
(হাজার হোক, নারীজাতি তো!)
“তাও, নয় নয় করে একেবারে কম হল না রে। তবে ঠিক মনে থাকে না এখন।
ব্যাঙ্গমা, তোর মনে আছে?”
“অ্যাঁ! ওহ, বয়েস?
তা কি করে বলি। অর্ধেক সময় তো তোর সঙ্গে ঝগড়া করেই কেটে গেল, বয়েস হিসেব করার সময় পেলাম কোথায়ে?!”
“কি বললি!! আমি ঝগড়া করি তোর সঙ্গে?!”
উফফ, আবার শুরু হল এই দুটোর!
তবে, সবসময়ে যে ঝগড়া করত তাও নয়।
একদিন দেখি, দুজনে ফিসফিস করে কিসব আলোচনা করছে।
বেশ অবাক হলাম। সর্বক্ষণ তো গাঁক গাঁক করে কথা বলে কানের পোকা বার করে!
কিন্তু কিছু বললাম না, পোষাচ্ছিল না সেদিন।
শুনলাম, ব্যাঙ্গমী বলছে ব্যাঙ্গমাকে – “দেখলি, কি বললাম! মানতে চাইছিলিস না।”
“ঠিকই বলেছিস ব্যাঙ্গমী”
ব্যাঙ্গমী – “কিরে ছেলে, মন খারাপ?”
“নাহ”
“আমরা কিন্তু জানি তোর কেন মন খারাপ”
মনে মনে ভাবলাম, তা জানবে না কেন, সারাক্ষণ তো হাঁড়ির খবর শুনছ!
“জানিস তো জিগ্যেস করছিস কেন? ন্যাকামো সহ্য হচ্ছে না মাইরি”
“আহা, রেগে যাচ্ছিস কেন?”
সত্যি তো, ওদের কি দোষ।
“শোন, মন খারাপ করিস না, যা করবি ভেবেছিস, ঠিকই করেছিস। তোর তো চেষ্টার কমতি ছিল না।“
আবার জ্ঞান!! পারা যায় না আর!
এভাবেই চলছিল ভাল-মন্দ মিশিয়ে।
দুজনের কথোপকথন শুনে কতকিছু মনে পড়ত, কখনো হাসি পেত, কখনো বা মনটা ভারী হয়ে আসত।
কিন্তু কাল রাত থেকে খুব জালাচ্ছে দুজনে, জানিনা কেন!
আজ সকালেও ওই নিয়েই খুব চিন্তান্বিত হয়ে দুজনে কথোপকথন চালাচ্ছিল।
ব্যাঙ্গমী – “হ্যাঁরে, ছেলেটা কাল রাত থেকে ফিরল না তো বাড়ী! এরকম তো করেনা, কোথাও গেলে বলে যায়।”
“ঠিকই বলেছিস।
মাঝখান থেকে আরেকটা কে এল বটে, ওরকমই দেখতে, কিন্তু এত সেই ছেলেটা নয়!”
আপনিই বলুন, মটকা গরম হবে না সাতসকালে!!
Leave a Reply